জমজম কুপের পানি পানের উপকারিতা - জমজমের পানি পানের ফজিলত

বসে পানি পান করার ফজিলত

আপনি যদি জমজম কূপের পানি পানের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং জমজম পানিতে হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে জমজম কূপের পানির পানের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং জমজম পানিতে হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্র - জমজমের পানি পান করার উপকারিতা - জমজমের পানির ইতিহাস

• জমজমের পানি পান করার উপকারিতা
• জমজমের পানির ইতিহাস
• জমজমের পানি সম্পর্কিত হাদিস 
• জমজমের পানির নানান গুনাগুন

জমজমের পানি পান করার উপকারিতা - 

পানির অপর নাম জীবন এ কথাটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সেই পানিটা হতে হবে বিশুদ্ধ ও আর্সেনিক মুক্ত। এক গ্লাস পানি শুধু পিপাসা মেটানরি কাজ করে না, পানি পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি শরীরে নানান রোগ ভালো করে। আপনি যদি প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি পান করেন তাহলে আপনার শরীরকে নানান অসুখ-বিসুখ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও কমোল করে তোলে।

আরো পড়ুন - -বসে পানি পান করার উপকারিতা ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন

সেটা যদি হয় জমজমের পানি তাহলে তো কোন কথাই নেই সাধারণ পানির থেকে হাজারগুন বেশি শরীরে উপকার বয়ে আনে জমজমের পানি।চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক জমজমের পানি পানের  কিছু উপকারিতা - 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় - জমজমের পানি মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একজন মানুষের শরীরে সমস্ত রোগ হই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে। আপনার বাড়ির আশপাশে মানুষের দিকে একটু খেয়াল করে দেখবেন অনেক মানুষ আছে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়েন তার একটি মাত্র কারণ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইউনিয়নেটি কমে যাওয়া। আর আপনি যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইউনিয়নেটি বাড়াতে চান তাহলে আপনার প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লিটার জমজমের পানি  পান করা প্রয়োজন।

ওজন কমাতে সাহায্য করে - বর্তমান সময়ে ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে মহিলা পুরুষ সবাই খুবই চিন্তিত। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি খেতে পারেন। এতে আপনি অতিরিক্ত ওজনের থেকে মুক্তি পাবেন। নিয়মিত পানি পান করলে অতিরিক্ত মেদ বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে দেয়। আপনি যদি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনার প্রয়োজন হবে প্রতিদিন 10 থেকে 12 লিটার পানি পান করা।

আরো পড়ুন - খাবার আগে 'বিসমিল্লাহ' বলা ফজিলত সম্পর্কে জানুন

আপনি যদি প্রতিদিন 10 থেকে 12 লিটার পানি পান করেন। আপনি যদি প্রতিদিন পানি পান করেন তাহলে আপনার অতিরিক্ত লাগবে না এর জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিশুদ্ধ পানির মধ্যে যেহেতু ক্যালোরি পরিমাণ একদম কম। এর ফলে আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে বাঁধাগ্রস্থ করবে ও আপনার ওজন ঠিক রাখবে।

ত্বক উজ্জ্বল রাখে - পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের চাই তার চেহারা অন্যান্য মানুষের থেকে আরো সুন্দর হয়ে উঠুক। তাহলে আজ থেকে আপনি সকাল ও বিকাল পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে থাকুন। প্রতিদিন মাত্র ৯ থেকে ১০ লিটার পানি যথেষ্ট আপনার ত্বক ও আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে। জমজমের বিশুদ্ধ পানি আপনার ত্বকের যে কোন সমস্যা যেমন এলার্জি বা ব্রণ ভালো করে তুলতে পারে। পুরো পৃথিবী একমাত্র পানি হল চেহারা উজ্জ্বল ও কোমল করার সহজ উপায়।

ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয় - আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নানান জায়গায় যেতে হয় যেমন অফিস,আদালত,বাজার- ঘাট ,দোকানে , মাঠে ইত্যাদি। এসব কাজ করার সময় কোন না কোন ভাবে আমাদের শরীরে ব্যথা লেগে যায় এইসব ব্যথা কমানোর জন্য পানি খুব উপকারী ও খুবই সস্তা একটি খাবার। আবার অনেক সময় ঠান্ডা লাগার কারণে ও কম্পিউটারের দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে মাথাব্যথা সমস্যা দেখা দেয়।

 এই মাথা ব্যথা সমস্যা দূর করার জন্য আমরা জমজমের পানি খেতে পারি।আবার অনেক সময় দেখা দেয় আমাদের যৌবনে আমাদের শরীরে কোন ব্যথা অনুভব না হলেও বৃদ্ধ বয়সে ব্যথাটা বুঝতে পারি। বৃদ্ধ বয়সে যেকোনো ব্যথা ওষুধ হিসাবে পানির বিকল্প নেই।

জমজমের পানির ইতিহাস -

মহান আল্লাহ তালার হুকুমে যখন হযরত ইব্রাহিম (রা:) শিশু ইসমাইল ও স্ত্রী হাজেরা কে মক্কায় নিয়ে আসেন। তার কিছুদিন পর হযরত ইব্রাহিম (রা:) মক্কা থেকে চলে আসেন।তার কিছুদিন পরপরই জমজম কুপের আবির্ভাব ঘটে।হযরত ইব্রাহিম (রা:) শিশু ইসমাইল ও স্ত্রী হাজেরা কে মক্কায় রেখে আসার সময় একটি থালাতে সামান্য কিছু পানি ও একটি থালাতে সামান্য কিছু খেজুর দিয়ে আসে।

আরো পড়ুন - গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানুন

হাজেরা (আ.) মক্কার জনশূন্য ভূমিতে কয়েকদিন পর্যন্ত শুধু এই পানি ও খেজুর খেয়ে থাকেন ও শিশু ইসমাইলকে তার বুকে দুধ পান করান। কিন্তু হঠাৎ এক সময় তিনি দেখলেন থলেতে থাকা পানি ও খেজুর ফুরিয়ে গেছে। তিনি জনশূন্য মরুভূমিতে খুবই একা হয়ে পড়লেন। তাছাড়া শিশু ইসমাইল ক্ষুধা জ্বালায় ছটফট করতে লাগলো।হাজেরা (আ.) শিশু ইসমাইলকে বুকের দুধ খাওয়ালেন। একটা সময়হাজেরা (আ.) সাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ে পানির জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলো।

হাজেরা (আ.) ৭ থেকে ৮ বার সাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ে ছোটাছুটি করার পর পানি না পেয়ে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে মোনাজাত করতে শুরু করল। এমন সময় মহান আল্লাহ তায়ালাহাজেরা (আ.)  এর দোয়া কবুল করে নিলেন।হাজেরা (আ.) তারপর শিশু ইসমাইল এর কাছে গিয়ে দেখতে পেল তার পায়ের নিচে একটি গর্ত সৃষ্ট হয়েছে এবং সে গর্ত থেকে অনবরত পানি বের হচ্ছে এবং ক্রমশ উপরে উথলে উঠছে ও প্রভাবিত হতে চাচ্ছে ।

এই সময় হযরতহাজেরা (আ.) খুবই খুশি হলেন ও কুপ বা গর্তের চারিপাশে বেঁধে দিলেন যেন পানি বেড়িয়ে পানি নষ্ট না হয় এবং পানি থামানোর জন্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেন "জমজম"। জমজম শব্দের অর্থ থেমে যাও। হযরতহাজেরা (আ.) জমজম কূপের নাম নেয়ার পর থেকে সবাই সেই কূপ টাকে জমজম কূপ নামে বলে ডাকে।

জমজমের পানি সম্পর্কিত হাদিস  - 

•  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, 'পৃথিবীর বুকে যত পানি আছে তার থেকে জমজমের পানি সবচেয়ে উত্তম' (সহি হাদিস ১১৬১-১১৬৭)।
• হযরত জর গিফারি (রা:) বলেছেন, 'অন্য পানির থেকে জমজম কূপের পানি বরকতময়'(বুখারী শরীফ-৩৩৪২)
• হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন, 'নিশ্চয়ই জমজম কূপের পানি বরকতময় কারণ তাতে রয়েছে খাবারের উপাদান স্বরূপ' (সহীহ মুসলিম-২৪৩৫)
• হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, 'যদি কোন ব্যক্তি কোন ভাল উদ্দেশ্যে নিয়ে জমজম কূপের পানি পান করে তাহলে সে ব্যক্তির উদ্দেশ্য পূরণ বা সফল হয়'(ইবনে মাজাহ-৩০৬২)
• হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত, 'তিনি যখন যাত্রার উদ্দেশ্য বিরত তখন তিনি জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেত তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন , হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জমজম কূপের পানি বহন করত'(তিরমিজি-৯৬৩)

জমজমের পানির নানান গুনাগুন -

এই পৃথিবীতে যত পানি আছে তার মধ্যে জমজমের পানি সবার থেকে উত্তম ও বিশুদ্ধ। পুরো বিশ্বের মানুষ ফ্রেন্ডস আলপসের পানিকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি বলে জানত। কিন্তু জমজমের পানি তার থেকেও বিশুদ্ধ বললে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছে। জমজমের পানিতে প্রতি লিটারে বাই কার্বনের পরিমাণ ৩৬৬ মিলিগ্রাম। জমজমের পানিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।